বিএমইউতে নার্সদের জন্য ন্যাশনাল রিসাসসিয়েটেশন প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
02 Aug, 2025 09:00 AM - 02 Aug, 2025 10:00 AM |
বিএমইউতে নার্সদের জন্য ন্যাশনাল রিসাসসিয়েটেশন প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস ও জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখবে রিসাসসিয়েটেশন প্রশিক্ষণ,
রোগীর মুমূর্ষুকালীন সময়ে নার্সদেরই তরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে: অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম
ব্যাগ এন্ড মাস্ক ভেন্টিলেশন পদ্ধতি বাঁচাবে হাজারো নবজাতকের জীবন
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)-তে আজ শনিবার ২ আগস্ট ২০২৫ইং তারিখে ই-ব্লকে নিওনেটোলজি বিভাগের উদ্যোগে নার্সদের জন্য ন্যাশনাল রিসাসসিয়েটেশন বিষয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তরের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ২২ জন নার্স অংশ নেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কর্মশালার সভাপতি নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান। কর্মশালায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এম আর খান শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিন আফরোজ । সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস ও জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখবে রিসাসসিয়েটেশন প্রশিক্ষণ কর্মশালা। রোগীদের সব সময় কাছে থাকেন নার্সরা। জরুরি মুহূর্ত, মুমূর্ষু অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য নার্সদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে নার্স যদি ডাক্তার ডাকেন, তাহলে ডাক্তার আসতে আসতেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজকের প্রশিক্ষণটিও সেই ধরণের একটি আয়োজন। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কোনো কোনো নবজাতকের জীবন যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকে তখন ব্যাগ এন্ড মাস্ক ভেন্টিলেশন এর সফল প্রয়োগ তাদের জীবন বাঁচাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, মায়ের গর্ভ থেকে নবজাতকের ভূমিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্তগুলো হলো আবেগ ও উদ্বেগের। নবজতাকের মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া বা নিওনেটাল অ্যাসফিক্সিয়া। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই মৃত্যু সহজেই এড়ানো সম্ভব। এ জন্যই আজকের এই হাতে কলমের প্রশিক্ষণ কর্মশালা, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নার্সদের জন্য এই প্রশিক্ষণ শিশু মৃত্যুহ্রাসে ভূমিকা রাখার সাথে সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে।
নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) এর বর্তমান প্রশাসনের নেতৃত্বে উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আজকের প্রশিক্ষণটি কর্মশালার আয়োজনও এরই প্রমাণ।
সহকারী অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ সাহা জানান, বর্তমানে দেশে ৫ বছরের নিচে শিশুর মৃত্যুহার ১ হাজারে ৩৩ জন, যার মধ্যে ১ হাজারে নবজাতকের সংখ্যা ২০ জন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যুহার হাজারে ২০ থেকে ১২ তে নামিয়ে আনতে হবে। এটা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। নবজাতকের মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম ওজন নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই জন্ম নেয়া, জীবাণু সংক্রমণ, বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া বা নিওনেটাল অ্যাসফিক্সিয়া। নিওনেটাল অ্যাসফিক্সিয়া হলো জন্মের সময় শ্বাসরোধ, জন্মের সময় বা জন্মের কাছাকাছি সময়ে শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে তার শারীরিক অবস্থা যে জীবন সংকটে পড়ে সেই অবস্থা, একে পেরিনেটাল অ্যাসফিক্সিয়াও বলা হয়। এই সময়ে নবজাতককে উদ্দীপ্তকরণ এবং ব্যাগ এন্ড মাকর্স ভেন্টিলেশন দিয়ে নবজাতককে যেমন বাঁচানো যায় আবার নবজাতককে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করা যায়। সেদিক থেকে আজকের রিসাসসিয়েটেশন বা পুনরুজ্জীবন কর্মশালাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতি হাজারে যে ২০ জন নবজাতক মারা যায় তার ৩০ শতাংশ মারা যায় নিওনেটাল অ্যাসফিক্সিয়ায়। শুধুমাত্র নিওনেটাল অ্যাসফিক্সিয়া প্রতিরোধ করতে পারলে বা এই সময়ে নবজাতককে দক্ষভাবে ব্যাগ এন্ড মাস্ক ভেন্টিলেশন দিতে পারলে নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১২-১৩ তে নামিয়ে আনা সম্ভব। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছাকাছি। সম্পাদনায়: ডা. সাইফুল আজম রঞ্জু। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।